থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি জানুন। ইসলামে এই রাতে আনন্দ, নাচ-গান, অপচয় বা অশ্লীলতার কারণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য এবাদত দোয়া ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নতুন বছরকে গ্রহণ করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

থার্টি-ফার্স্ট-নাইট-সম্পর্কে-ইসলাম


অনেকেই এ রাতে ভুল পথে সময় নষ্ট করে অথচ ইসলাম আমাদের সত্যিকারের সুখ ও কল্যাণের জন্য হালাল বিনোদন ও আত্মসংযমের গুরুত্ব দেয়। থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্বন্ধে ইসলাম কি বলে তা বিস্তারিত আমরা জানবো এই ওয়েবসাইটে।

সূচিপত্র থার্টিফার্স্ট নাইট সম্বন্ধে ইসলাম কি বলেঃ

থার্টি ফার্স্ট নাইট এর উৎপত্তিঃ

থার্টি ফার্স্ট নাইটের সূচনা মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও খ্রিস্টান ধর্মীয় প্রথা থেকে এসেছে। প্রাচীন রোমানরা সূর্যের দেবতা “জনুস” (Janus)-এর উপাসনা করত এবং বছরের শুরুতে তাকে খুশি করার জন্য উৎসব পালন করত। পরবর্তীতে খ্রিস্টান চার্চ এ প্রথাকে নিজেদের সংস্কৃতির অংশ বানিয়ে নেয়। সময়ের সাথে সাথে এটি ধর্মীয় রূপ হারিয়ে এখন বিশ্বব্যাপী এক ধরনের সামাজিক উৎসব হিসেবে পালিত হচ্ছে। তবে ইসলাম স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভিন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১)। এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, অমুসলিমদের বিশেষ উৎসব ও সংস্কৃতির অনুকরণ করা মুসলমানদের জন্য অনুমোদিত নয়। থার্টি ফার্স্ট নাইট যেহেতু খ্রিস্টান ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে আগত, তাই মুসলমানদের জন্য এটি পালন করা অনুচিত। বরং নতুন বছরের আগমনে আমাদের উচিত অতীত জীবনের ভুলত্রুটি পর্যালোচনা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে সৎকর্মের অঙ্গীকার করা।

থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কী বলেঃ

ইসলাম ধর্মে আল্লাহ নির্ধারিত দুটি বড় উৎসব রয়েছে—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এ ছাড়া ভিন ধর্মীয় প্রথা বা উৎসব পালনের অনুমতি নেই। থার্টি ফার্স্ট নাইট মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে আগত, যেখানে গান-বাজনা, নাচ, মদ্যপান, অপচয় এবং অশ্লীলতা প্রধান ভূমিকা পালন করে। ইসলাম এ ধরনের কার্যকলাপকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার নৈবেদ্য এবং ভাগ্য নির্ধারণের তীরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ, সুতরাং এগুলো থেকে বেঁচে থাক।” (সূরা মায়িদাহ: ৯০)।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১)। এই হাদিস প্রমাণ করে, মুসলমানদের জন্য অমুসলিমদের উৎসব অনুকরণ করা বৈধ নয়। সুতরাং, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। একজন মুসলমানের উচিত এ রাতকে বিনোদনের পরিবর্তে আল্লাহর ইবাদত, দোয়া ও আত্মসমালোচনায় কাটানো।

প্রাশ্চাত্র্য সংস্কৃতির প্রভাব মুসলিম সমাজেরঃ

বর্তমান সময়ে বিশ্বায়নের প্রভাবে পাশ্চাত্য ও সংস্কৃতি দ্রুত মুসলিম সমাজের ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত থার্টিফার্স্ট নাইট ,ভ্যালেন্টাইন ডে ,হ্যালো ইন ইত্যাদি উৎসব এখন অনেক মুসলিম দেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টেলিভিশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইন্টারনেটের কারণে তরুণ প্রজন্ম এসব প্রথাকে আধুনিকতা ও আনন্দের প্রতীক মনে করছে। কিন্তু বাস্তবে এসব কথা ইসলামের মূল শিক্ষা ও মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। গান-বাজনা ,অশ্লীলতা , মদ্যপান  ,মাদক অপচয়ের মত বিষয়গুলো এসব উৎসবের প্রাধান্য পায় যা মুসলমানদের ঈমান ও চরিত্রকে দুর্বল করছে।

আরোও পড়ুনঃসজনে পাতার উপকারিতা

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন; "তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের পথ অনুসরণ করবে হাতের আঙ্গুলের মত একবারে হুবহু।" এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হয় মুসলিম সমাজ যদি সচেতন না হয় তবে ধীরে ধীরে তারা ভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতির অনুকরণে নিজেদের পরিচয় হারাবে। তাই মুসলমানদের উচিত বিদেশি সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ না করে ইসলামের আদর্শ জীবনধারাকে আঁকড়ে ধরা।

থার্টি ফার্স্ট নাইট ইসলামে হারামঃ

ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা হারাম । কারণ এটি ইসলামের উৎসব নয় বিধর্মী সংস্কৃতি থেকে আগত একটি প্রথা। এ রাতে সাধারণত গান-বাজনা নাচ ,মদ্যপান ,অশ্লীলতা জুয়া ও অপচয় মত কাজ বেশি হয় যা কুরআন ও হাদিস দ্বারা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন নিশ্চয়ই মদ জুয়া প্রতিমার নৈবদ্য এবং ভাগ্য নির্ধারণের তীরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ সুতরাং এগুলো থেকে বেঁচে থাকো।

তাই একজন সচেতন মুসলমানদের উচিত থার্টি ফার্স্ট নাইটে আনন্দ উল্লাসে না কাটিয়ে আল্লাহর এবাদত নামাজ দোয়া ও আত্মসমালোচনার ব্যয় করা এতে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় ক্ষেত্রে কল্যাণ লাভ করা সম্ভব।

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও হাদিসের আলোকে ইসলামের অবস্থানঃ

থার্টি ফাস্ট নাইট মূলত বিদেশি সংস্কৃতি থেকে আগত একটি উৎসব ,যার সঙ্গে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই । ইসলাম মুসলমানদের জন্য আল্লাহ নির্ধারিত ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহা ছাড়া অন্য কোন উদযাপন কে বৈধ মনে করে না বরং ভিন্ন ধর্মীয় উৎসব অনুসরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ), বলেছেন "যে ব্যক্তি কোন জাতি সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।" আরেক হাদিসে এসেছে ,"আমার উম্মতের কিছু লোক থাকবে যারা ব্যভিচার , রেশম , মদ্যপান এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।"

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও অশ্লীলতাঃ

থার্টি ফার্স্ট নাইট আজকের সমাজে মূলত অশ্লীলতা, ভোগ-বিলাস ও গুনাহর প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রাতে পার্টি, ডিস্কো, নাচ-গান, মদ্যপান, জুয়া, আতশবাজি এবং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। অথচ ইসলাম কঠোরভাবে অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন: “তোমরা অশ্লীল কাজের নিকটেও যেয়ো না, তা প্রকাশ্য হোক বা গোপন।”

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন: “লজ্জা ঈমানের একটি অংশ।"অথচ থার্টি ফার্স্ট নাইটের অশ্লীল কার্যকলাপ মুসলমানদের লজ্জাশীলতা ধ্বংস করছে, যুবসমাজকে গুনাহর দিকে টেনে নিচ্ছে এবং পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি করছে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে এ রাতের অশ্লীল আনন্দ-উল্লাস কেবল হারামই নয়, বরং ঈমান ও চরিত্র নষ্ট করার বড় মাধ্যম। মুসলমানদের উচিত এ ধরনের অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থেকে আল্লাহর ইবাদতে সময় কাটানো।

ইসলামিক দৃষ্টিতে নতুন বছরঃ

ইসলামে নতুন বছর উদযাপন করার কোন কথা নেই কোরআন ও হাদিসের কেবল দুটি উৎসব কথা বলা হয়েছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা । ইংরেজি নতুন বছর মুসলিমদের জন্য ইবাদত বা আনন্দের দিন নয় বরং এটি বিদেশি সংস্কৃতির অংশ যেখানে অশ্লীলতা মদ্যপান ও গান-বাজনার মাধ্যমে রাত কাটানো হয় যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

একজন মুসলমানের জন্য নতুন বছরের অর্থ হওয়া উচিত আত্মসমালোচনা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। অতীতের গুনাহ থেকে তওবা করে সামনে সৎ কর্মের পরিকল্পনা গ্রহণ করায় ইসলামী বিশ্বের সঠিক পথ।

থার্টি ফার্স্ট নাইটের কার্যকলাপ ও ইসলামের নিষেধাজ্ঞাঃ

থার্টি ফার্স্ট নাইট এর প্রধান কার্যকলাপ হল নাচ-গান ডিসকো পার্টি মদ্যপান আতশবাজি অশ্লীলতা বিপুল অর্থের অপচয়। এসব কার্যকলাপ ইসলাম সম্পন্ন ভাবে নিষিদ্ধ করেছে। কোরআনে আল্লাহ বলেন "নিশ্চয়ই মত জুয়া প্রতিমার নৈবদ্য ভাগ্য নির্ধারণের তীরসমূহ  শয়তানের অপবিত্র কাজ সুতরাং এগুলো থেকে দূরে থাকো।"

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন "যে ব্যক্তি কোন জাতির সদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে" সুতরাং মুসলমানদের জন্য থার্টি ফার্স্ট নাইটের কার্যকলাপ অনুসরন করা হারাম এবং চরিত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কার তৈরি করে। তাই মুসলমানদের উচিত এই রাতে এবাদত ও দোয়া আত্মসমালোচনা মাধ্যমে কাটানো।

মুসলমানদের জন্য করণীয় ও বিকল্প আমলঃ

থার্টি ফার্স্ট নাইট মুসলমানদের জন্য আনন্দ উল্লাসের দিন নয় ,বরং আত্ম সমালোচনা ও ইবাদতের সুযোগ । তাই মুসলিমদের করণীয় হলো এই রাতে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যেমন অতীত জীবনের ভুলগুলি নিয়ে চিন্তা করার আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং আগামীর জন্য অঙ্গীকার করা।
এই রাগকে বিকল্প আমূল দিয়ে মূল্যবান করা যায়। যেমন নফল নামাজ আদায় করা কোরআন তেলাওয়াত করা দুরুদ পাঠ করা দোয়া করা এবং পরিবারের সদস্যদের ইসলামী আদর্শের উদ্বুদ্ধ করা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন "বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজেকে প্রযোজনা করে মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য কাজ করে।"

পরিশেষে, ইসলামের আলোকে থার্টিফার্স্ট নাইটঃ

নতুন বছরে মুসলমানদের জন্য আনন্দ উল্লাস গান বাজনা বা অশ্লীলতার উপলক্ষ্য নয় বরং এতি অতীতের ভুল ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে জীবন করার সুযোগ। থার্টি ফার্স্ট নাইটের নামে যে কার্যকলাপ সমাজের চালু আছে তা ইসলামের শিক্ষা ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসলাম মুসলমানদের জন্য দুটি নির্ধারণ করেছে এবং ভিন্ন ধর্মীয় উৎসব অনুকরণ কে হারাম ঘোষণা করেছে। তাই নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে একজন মুসলমানের করণীয় হলো আল্লাহর কাছে তওবা করা জীবনের হিসেব নেওয়া এবং ভবিষ্যতে সৎ কর্মে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া।
আল্লাহতালা বলেন ,"হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তি আগামী দিনের জন্য কি প্রেরণ করেছ তা ভেবে দেখুক।" এই আয়াত আমাদেরকে সময় সঠিক ব্যবহার ও ভবিষ্যতে প্রস্তুতির শিক্ষা দেয়। তাই নতুন বছরকে ইবাদত দোয়া কোরআন পাঠ সৎকাজের পরিকল্পনা অনেক আমলে শুরু করা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শামীম ব্লগ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।;

comment url